হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক নিয়মগুলো জেনে রাখুন আজই
হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ হাঁস পালন করে লাভবান হচ্ছেন। যার ফলে অনেকেই হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। হাঁস পালনে লাভবান হতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যথায় হাঁস পালনে লাভের বদলে উল্টো লসের মুখে পড়তে পারেন। তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাবো সঠিক নিয়মে হাঁস পালন পদ্ধতি।
হাঁস পালন পদ্ধতি
হাঁস পালন খুবই সহজ এটা আমরা সবাই জানি। কারণ হাঁস আশেপাশে পুকুর থাকলে খুব সহজেই পালন করা যায়। হাঁস পালন সহজ হলেও হাঁসের পরিচর্যা মোটেও সহজ নয়। শুধুমাত্র পরিচর্যার অভাবে অনেকেই হাঁস পালন করে লাভবান হতে পারেন না। তাই হাঁস পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে হাঁসের পরিচর্যা করতে হবে।
হাঁস পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে আশেপাশে একটি পুকুর রয়েছে। কারণ হাঁস বেশিরভাগ সময় পানিতে থাকতেই পছন্দ করে থাকে এবং পানিতেই থাকে। হাঁস পানিতে থাকলে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। হাঁস পানিতে থাকলে হাঁসের খাবার খুব কম লাগে এবং হাঁসের রোগ খুব কম হয়। হাঁসের খাবার কম লাগার কারণ হচ্ছে পুকুর বা নদী-নালাতে হাঁস থাকলে সেখানে হাঁস ছোট মাছ কচুরিপানা সহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকে যার ফলে হাঁসের খাবার তুলনামূলক কম লাগে। একই সাথে রোগ বালাইও কম হয়। তাই আশেপাশের নদী নালা বা পুকুর রয়েছে এমন জায়গা দেখে হাঁস পালন করুন।
হাঁসের জাত
হাসের জাত সম্পর্কে জানার আগে আপনার এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি হাঁস কিসের জন্য পালন করছেন। সেটা হতে পারে আপনি হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করছেন কিংবা হাঁসের মাংস বৃদ্ধির জন্য বা মাংস উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন করছেন। আবার এমনটা হতে পারে ডিম এবং মাংস দুইটা উৎপাদনের জন্যই হাঁস পালন করছেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা হাঁসের জাত রয়েছে। তাই হাস আপনি কিসের জন্য পালন করছেন সেটা নিশ্চিত হতে হবে। নির্দিষ্ট জাত নির্বাচন করার পর আপনি হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন নিচে উল্লেখিত তিনটি স্থান থেকে
- নারায়ণগঞ্জ হাঁস প্রজনন কেন্দ্র
- নওগাঁ জেলার আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার
- খুলনার দৌলতপুরের কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার
এই তিনটি জায়গা ছাড়াও আপনি চাইলে আপনার আশেপাশের হ্যাচারি থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ভালোভাবে লক্ষ্য করে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।
মাংস উৎপাদনের জন্য যদি হাঁস পালন করে থাকেন সেক্ষেত্রে জনপ্রিয় কিছু হাঁসের জাত হলো: পিকিং, রুয়েল ক্যায়ুগা, আয়লেশবারি, মাসকোভি এবং সুইডেন। এই প্রজাতির হাঁসগুলো মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। অন্য হাসের তুলনায় এগুলোতে দ্রুত মাংস বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেকটি হাঁসের ওজন হয়ে থাকে ৪ থেকে ৫ কেজি।
ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন করলে সেক্ষেত্রে আপনি জিনডিং জাতের হাঁস ও ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁসের মধ্যে যেকোনো একটি পালন করতে পারেন এগুলো ডিম উৎপাদনের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
যদি ডিম এবং মাংস একই সাথে উৎপাদনের জন্য হাঁস পালন করেন সে ক্ষেত্রে আপনি খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস পালন করতে পারেন। এ জাতটি মাংস এবং ডিম উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয়। এ জাতের হাঁসের নাম খাকি ক্যাম্পবেল হওয়ার একটি কারণ হলো এটি খাকি কালার বা ছাই বাদামি রংয়ের হয়ে থাকে।
হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিং
ব্রুডিং মানে হচ্ছে তাপ দেওয়া। বাচ্চা অবস্থায় হাঁস নিজের তাপ নিজে দিতে পারে না। বাচ্চাকে তাপ দেওয়ার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে সেটিকে ব্রুডিং বলা হয়ে থাকে।
প্রথম অবস্থায় গোলাকার গার্ড তৈরি করে বাচ্চাকে তাপের কাছাকাছি রাখতে হবে। বাচ্চার পানি ও খাবার দিতে হবে গার্ড এর ভেতরেই। ব্রুডারের আকার ও অবস্থার উপর নির্ভর করে বাচ্চার জাত ও উপযোগিতার অনুসারে তাপের ব্যবস্থা নিতে হবে। আস্তে আস্তে তাপ কমিয়ে আনতে হবে প্রতি এক সপ্তাহ পরে ৫ডিগ্রী ফাঃ করে তাপমাত্রা কমাতে হবে।
হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থা
সাধারণত প্রায় সব জাতের হাঁস উভয়ভোজী হয়ে থাকে শুধুমাত্র রাজহাঁস ছাড়া। অর্থাৎ হাঁসের খাবারে আমিষ এবং শ্বেতসার দুটোরই আধিক্য রয়েছে। হাঁস পালনে অনেক সুবিধা রয়েছে এর মধ্যে সবথেকে বড় সুবিধা হলো এরা পুকুর বা নদী-নালা থেকেই অনেক খাবার খেয়ে থাকে যেমন ছোট মাছ, কচুরিপানা, শামুক আরো অনেক কিছু। যার ফলে হাঁস পালনে তুলনামূলক খাবার কম লাগে স্বাভাবিক এর চেয়ে। হাসকে মুরগির নিয়মে খাবার দিতে হবে কিন্তু মুরগির খাবার হাঁসকে খাওয়ানো যাবে না। মুরগির খাবার হাসকে খাওয়ালে হাঁসের স্বাভাবিক উৎপাদন হবে না।
যে সকল হাঁস শুধুমাত্র ডিম দেওয়ার জন্য চাষ করা হয় সে হাঁসকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। তবে আমাদের দেশে যেই দেশীয় হাঁস গুলো হয়ে থাকে এগুলোকে চালের কুড়ো, যে কোন খৈল, আটা-ভুসি, শামুক-ঝিনুক, এগুলো খাওয়ালেই যথেষ্ট।
হাঁস পালন করলে এ বিষয়টা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে হাঁস প্রচুর পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকে। তাই হাঁস পালন করলে অবশ্যই আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে হাঁসের খাবারের যোগান দিতে হবে। হাঁস পালনে ভালো ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাঁসকে কখনো শুকনো খাবার দেওয়া যাবে না। কারণ হাঁস যতটুকু খাবার খায় তার দ্বিগুণ পানি খেয়ে থাকে। শূন্য থেকে আট সপ্তাহ বয়সী হাঁসকে তার ইচ্ছামত খাবার দিতে হবে। আর প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসকে দিনে দুই বেলা খাবার দিলেই যথেষ্ট।
হাঁসের ঘর ও হাঁসের রোগ
একটি পূর্ণবয়স্ক হাঁস থাকার জন্য ২ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। হাস থাকার ঘরে যেন যথেষ্ট পরিমাণে আলো এবং বায়ু চলাচল করে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাতের বেলা যেন হাস অন্ধকারেই থাকে। হাঁসকে যেন কোন পশু আক্রমণ না করে বিশেষ করে শেয়াল সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর হাঁস যেখানে থাকবে মেঝেতে তুষ কিংবা কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে দিতে পারেন এতে করে হাঁস আরামে থাকবে এবং হাঁসের ডিমও ভাঙবে না।
হাঁসের খুব বেশি রোগ হয় না খামারিকে কিছু বিষয়ে সচেতন হলেই হবে একই সাথে ভালোভাবে হাঁসের পরিচর্যা করতে হবে। হাঁসের খামারকে সব সময় রোগমুক্ত রাখতে হবে। খাবার পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। হাঁসের জাত অনুযায়ী সঠিক সুষম খাদ্য হাঁসকে দিতে হবে। হাঁসের ঘর কে জীবাণু নাশক দিয়ে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এভাবে পরিচর্যা করলে কোন রকম ব্যয় ছাড়াই হাঁসকে রোগমুক্ত রাখা সম্ভব।
হাঁস পালনে একটু সচেতন হলেই কোন রকম রোগ হবেনা। তবে হাঁসের মারাত্মক দুইটি রোগ রয়েছে ডাক-প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগ। এই দুটি রোগ থেকে বাঁচার জন্য নিকটস্থ পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাঁসকে টিকা দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। হাঁস পালন পদ্ধতি সহ আরো এমন সব আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আর পড়ুন – হাঁস সম্পর্কে টিপস সঠিক ও কার্যকরী নিয়মগুলো জেনে নিন আজ