ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া ও ময়লা হয়ে যাওয়া মানে অচল টাকা?
মগবাজার থেকে রিকশায় করে কারওয়ান বাজার অফিসে যাচ্ছিলাম। ভাড়া দিতে গিয়ে দেখছি বিপত্তি। পাশের দুটি ১০ টাকার নোট ছিঁড়ে গেছে। রিকশাচালক বলছে অচল টাকা এবং সে নিতে রাজি হচ্ছে না, তার কোনো ধারণা নেই। পরে অনেক কষ্টে ব্যাগটি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করার পর ভাড়া পরিশোধ করলাম। বিরক্ত লাগলো, এখন ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া টাকা দিয়ে কি করবো?
এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় প্রতিদিনই। একটি ছেঁড়া নোট পাল্টে নেওয়ার কথা প্রায়ই চিন্তা করা হয় না। আসলে, ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া নোটগুলি কীভাবে পাল্টে নেওয়া যায় সে সম্পর্কে তাদের খুব কম ধারণা থাকায় অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় বড় ছেঁড়া নোট বাজারে বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে গ্রাহক চিন্তিত থাকেন। অচল নোট পড়ে থাকে মানিব্যাগের এক কোনায়।
ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া, ময়লা হওয়া মানেই অচল টাকা
শুধু ঢাকায় নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কয়েকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া অচল টাকা সর্বত্র গ্রহণ করা হয়, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেও রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক ও বিশেষ পরিদর্শন করেছে। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে কোনো ব্যাংক শাখার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এমডি) ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া অচল টাকা বদল না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুবিধা না দিলে গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানাতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া অচল টাকা বদলযোগ্য হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিনিময় করা যাবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ১০০%, ৭৫%, ৫০% ফেরত দেওয়া হয়। সাধারণত, নোটের ৫১ শতাংশের কম ছিঁড়ে গেলে, নোটের সম্পূর্ণ মূল্যমানই প্রদান করা হয়। কিন্তু একটি একটি নোটের অর্ধেকও কম অংশ থাকলে, তা ফেরত দেওয়া হয় না।
এ ছাড়া দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের যেকোনো শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া নোট বিনিময় করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করার পর ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া নোটের বিপরীতে সম্পূর্ণ পরিবর্তন মূল্য (১০০ শতাংশ) প্রদান করেন। গ্রাহকের জমা দেওয়া নোটের সম্পূর্ণ নোটের তিন চতুর্থাংশ অবশ্যই বিদ্যমান থাকতে হবে এবং নোটটি আসল কিনা তা চিহ্নিত করা আবশ্যক। যদি জমা দেওয়া নোটে একাধিক খণ্ড থাকে, তাহলে উভয় খণ্ডকেই একই নোটের অংশ হতে হবে। প্রমাণ দেখানোর জন্য একই টাকা পিছনে পাতলা কষ্টেপ দিয়ে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
ব্যাংকগুলোর নির্দেশনা অনুযায়ী, তিন চতুর্থাংশ ছেঁড়া ও নোংরা নোটের ক্ষেত্রে জমার পরিমাণ অবিলম্বে পরিশোধ করা হবে। অত্যধিক ছেঁড়া, জীর্ণ, পোড়া, ঝলসে যাওয়া এবং তিন-চতুর্থাংশের কম ব্যাংকনোট: পরিবর্তনের মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রদান করা হবে। এই মূল্য সংগ্রহের জন্য, নোটগুলির আমানতকারীকে এই নোটগুলি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর জন্য ডাক বা কুরিয়ার চার্জ আদায় করা হবে।
তবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যাংক কর্মকর্তারা ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া নোট বদল করেন না। হোটেল ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, “ব্যাংকে গিয়েও এই সেবা পাইনি। কয়েকবার ফিরে এসেছি। তাই এখন যারা কিনছে তাদের ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া টাকা দিয়ে দিচ্ছি। তারা ১০০ টাকায় ৭০ টাকা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, তফসিল ব্যাংক শাখাগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে জনসাধারণের কাছ থেকে সব ধরনের নোট গ্রহণ করতে, তার মূল্য নির্বিশেষে এবং ছেঁড়া ও নোংরা নোটের বিনিময় মূল্য পরিশোধ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা কঠোরভাবে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী, বিষয়টি সাধারণের কাছে সহজ ও বোধগম্য করার জন্য ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নোটিশ দিতে বলে দেওয়া হয়েছে, যাতে জনসাধারণ সহজেই দেখতে পায় যে, ছেঁড়া-ফাটা ও পুড়ে যাওয়া নোট এখানে বদলে দেওয়া হয়।
শুভঙ্কর সাহা আরও বলেন, গ্রাহক এই সেবা পাচ্ছেন কি না তা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন করলে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহক সুবিধা পাচ্ছেন না। আমি ব্যাংকার্স মিটিংয়েও বলেছি এই কথা। আমরা জানি যে এই দাবি আংশিক সত্য। কিন্তু সব ব্যাংক এটা করে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অভিযোগ করা যেতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমি ১০ টাকার দুটি নোট নিয়ে নিকটস্থ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় যাই। তারা সেই নোট পরিবর্তন করে আমাকে আরও ভালো একটি নোট দিয়েছে। ছেঁড়া নোট দিয়ে কী করা হয় জানতে চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০০টি ছেঁড়া নোট সংগ্রহের পর সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন নোট সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শুভঙ্কর সাহা আরও বলেন, বাজারে বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার নগদ সরবরাহ রয়েছে। গড় হিসাবে ছোট মানের নোটগুলো কম দিন চলে। উচ্চ মূল্যের ব্যাংকনোটের নিরাপত্তা অনেক বেশি হয়। হাত ঘোরে বেশি ছোট টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে বছরে মোট সরবরাহের এক-চতুর্থাংশ পাল্টে দিতে হয়।
আরও পড়ুন – ঢাকা বিভাগে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা সমূহ